Post Top Bottom Google Ad Code

খাদিমপাড়ায় ৫ লাখ টাকা চাঁদা দিতে না পারায় ৪ দেয়ালে বন্দি ৭ পরিবার

  • প্রকাশের সময় : ০২/০৬/২০২৫ ০৮:৩৬:৩৫ AM

Share
65

সিলেটের শহরতলির খাদিমপাড়া এলাকায় ৫ লাখ টাকা চাঁদা দিতে না পারায় চার দেয়ালে বন্দি হয়ে আছেন ৭ পরিবারের লোকজন। বাড়ি নির্মাণকালে রাস্তা থাকলেও দেশের পটপরিবর্তনের পর হঠাৎ প্রায় ৫০ বছরের পুরোনো রাস্তা বন্ধ করে দেওয়ায় চরম বিপাকে পড়েছে ৭টি বাড়িরর লোকজন। এমনই অভিযোগ ভোক্তভুগী পরিবারগুলোর।

এ ঘটনায় বিগত বছরের ৭ নভেম্বর জামাল আহমদ কামাল রাস্তায় দেয়াল নির্মাণ করে চাঁদা দাবিকারী আবদুল খালিক বক্সসহ ৪/৫জনকে অভিযুক্ত করে সিলেটের জেলা প্রশাসক, র‌্যাব-৯ এর অধিনায়ক, জেলা স্টেডিয়ামের আর্মি ক্যাম্পের কমান্ডার, সিটি করপোরেশনের প্রশাসক, প্রধান নির্বাহী অফিসার ও উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) বরাবরে অভিযোগ প্রদান করেছেন। তবে অভিযোগ দায়েরের ৮ মাস অতিবাহিত হলেও এখনো পর্যন্ত কোনও ব্যবস্থা নেয়নি সংশ্লিষ্ট প্রশাসন।

পরিবারগুলোর অভিযোগ- পতিত আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর আবদুল খালিক বক্স জামাল আহমদ কামালের নিকট ৫ লাখ টাকা চাঁদা না দাবি করেন। চাঁদা না দিলে এই রাস্তা দিয়ে তিনি চলাচল করতে দিবেন না বলে জানান।

চাঁদাবাজির এই ঘটনায় ভুক্তভোগী জামাল আহমদ কামাল শাহপরাণ (রহ.) থানা-পুলিশকে জানান। এতে ক্ষুব্ধ হন আবদুল খালিক বক্স। তিনি ৭ পরিবারের দীর্ঘদিনের পুরোনো এজমালি রাস্তায় ৮ ফুট উঁচু দেয়াল নির্মাণ করে চলাচলের পথ বন্ধ করে দেন। তাছাড়া মামলা করলে প্রাণনাশের হুমকি প্রদান করেন আবদুল খালিক বক্স। জামাল আহমদ কামালের পরিবারসহ আরও ৬টি পরিবার অসহায় হয়ে পড়েছে। আব্দুল খালিক বক্সের ভয়ে অন্য পরিবারগুলো রাস্তা না থাকায় বিচারের আশায় প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কষ্টের টাকায় তিল তিল করে গড়ে তোলা নিজ বাড়িই যেন এখন আবদুল খালিক বক্সের জন্য জেলখানায় পরিণত হয়েছে।

সরেজমিনে সিলেট মহানগরীর খাদিমপাড়া এলাকার ২ নম্বর রোডের বাড়িগুলোর সামনে গিয়ে দেখা গেছে এলাকায় সরু একটি রাস্তার মাথায় উঁচু দেয়াল। দেয়ালের ওপারে ৭টি বাড়ি রয়েছে। ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর আবদুল খালিক বক্স সেখানে দেওয়া নির্মাণ করেন। এর ফলে ৭ পরিববার জিম্মি হয়ে আছে একরকম। শিশু থেকে বৃদ্ধা- বাড়ির বাইরে বের হতে হলেই কাদা পানি মাড়িয়ে যেতে হচ্ছে । তাছাড়া সেখানে রাজু আহমদ নামের একজন ব্যক্তিকে একইভাবে আবদুল খালিক বক্স রাস্তা বন্ধ করে জিম্মি করে রেখেছিলেন। তবে তিনি আবদুল খালিক বক্সের বিরুদ্ধে মামলা করার পর তাকে দেয়ালের পাশ দিয়ে একটি গেইট নির্মাণ করে দেয়।

জানা যায়, সিলেট সদর উপজেলার শাহপরান থানার বহর মৌজার জে এল নং ৭০, খতিয়ান নং- ৫০৪/১৫৯৮, ডিপি ১৭৮৪, বর্তমানে সে. জ. জে এল নং ৬১, দাগ নং- ৭৫, নালিশা রাস্তা রকম ভূমি ৭.৫০ শতক রাস্তাসহ বাড়ী। তাছাড়া আরো ৬টি বাড়ি রয়েছে সেখানে।

পুলিশি তদন্ত ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রাস্তাটি জামাল আহমদ ও শরীকানদের মালিকানাধীন প্রাইভেট রাস্তা।

শাহপরান (রহ.) থানা প্রদত্ত প্রতিবেদনে দেখা যায় নালিশা ভূমি দীর্ঘদিন থেকে চলাচলের রাস্তা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তাছাড়া পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস লাইন রাস্তার তলদেশ দিয়ে স্থাপন করা হয়েছে। উক্ত ভূমির এস এ রেকর্ডিয় মালিকরা জমি বিক্রয়ের সময় দলিলে উক্ত রাস্তাটিকে সরেয়াম রাস্তা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এরকম কিছু দলিলে আবদুল খালিক বক্স স্বাক্ষী হিসেবেও স্বাক্ষর করেছেন।

নাম প্রকাশে অনচ্ছিুক এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, রাস্তাঘাট প্রতিটি মানুষের নাগরিক অধিকার পরিবারগুলো দীর্ঘদিন ধরে এই বাড়িতেই বসবাস করে আসছে। ৫ আগস্টের পর হঠাৎ রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া অন্যায় কাজ করেছেন আবদুল খালিক বক্স। আমরা চাই তাদের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া হোক।

ওই ৭ পরিবারের কাছে জায়গা বিক্রি করা হিরা মিয়া জানান, দীর্ঘদিন থেকে সেখানে রাস্তা ছিলো তবে হঠাৎ শুনতে পেয়েছি আবদুল খালিক বক্স রাস্তাটি বন্ধ করে দিয়েছেন। কেন রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছেন সেটি তিনি ভালো জানেন।

সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ বলেন, এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যে কেউ কারও প্রতি অন্যায় জুলুম করার কোনো সুযোগ নেই।

উল্লেখ্য, উপরোক্ত রাস্তা দিয়ে চলাচলে বাধা প্রদানের প্রেক্ষিতে সিলেটের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আদেশে শাহপরান (রহ.) থানায় রাজু আহমদ প্রথম পক্ষ হয়ে আবদুল খালিক বক্সদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. কামাল হোসেন তার তদন্ত প্রতিবেদনে নালিশা ভূমির রাস্তাটি দীর্ঘদিন ধরে সরেয়াম রাস্তা হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে এবং ৫/৬ পরিবার এই রাস্তা দিয়েই চলাচল করে যাচ্ছেন বলে উল্লেখ করেন।


সিলেট প্রেস / ০২ জুন ২০২৫/ এফ কে


Local Ad Space
কমেন্ট বক্স
সিলেটপ্রেস ডেস্ক

সিলেটপ্রেস ডেস্ক

প্রকাশ: ২০২৫-০৬-০২ ০৮:৩৬:৩৫